রবিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৬

The wonderfull Simla Village in Sirajgang Dristrict


T

শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৬

আধুনিক বাংলা গানের কিছু লিরিক

বাংলা গানের লিরিক


(০১)

আমি ফাইসা গেছি


আমি ফাইসা গেছি,
আমি ফাইসা গেছি,
আমি ফাইসা গেছি
মাইনকার চিপায়।
আমারও দিলের চোট
বোঝে না কোনো হালায়।।
কোন্‌ পাগলে পাইছিল
করছে শখের শাদী।
ক্ষমতার ঝিম-তিম,
ভাবে শাহজাদী।
সকাল-বিকাল, রাইত-দুপুর
বউয়ে দেয় ঠেলা।
কয় বউ পুষার মুরাদ নয়
তয় বিয়া করছস কেলা।
আমি এধার কামাল ওধার করি
সারাদিন ফেচকি মারি।
দিনের বেলায় আরতদারী
রাইতে চোরাকারবারি।
দিন-দুনিয়া সবই গেল
জীবন ভেস্তে যায়।।
মাইয়া আমার চিজ একখান
যেমুন ফিল্মের নায়িকা,
মাধুরী, ঐশ্বরিয়া, কাজলরে
কয় অফ যা।
পোলায় আমার শিক্ষিত
পড়ে দশ কেলাসের উপরে।
হাত খরচা না দিলে
ইংলিশে গাইল পাড়ে।
মনে মনে কই আমি
গাইলের আর হুনছস কি
আমগ গাইল হুনলে পড়ে
খাড়াইব মুরগাদি।
আমি হালায় কুলুর বলদ
ফাইটা জীবন যায়।।

(০২)

চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা


চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো
এখন আর কেউ আটকাতে পারবেনা
সম্বন্ধটা এই বার তুমি ভেস্তে দিতে পারো
মা-কে বলে দাও বিয়ে তুমি করছো না
চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা সত্যি
আর মাত্র কয়েকটা মাস ব্যাস
স্টার্টিংয়েই ওরা ১১০০ দেবে তিন মাস পরে কনফার্ম
চুপ করে কেন বেলা কিছু বলছো না
এটা কি ২৪৪১১৩৯
বেলা বোস তুমি পারছো কি শুনতে
১০-১২ বার রং নাম্বার পেরিয়ে তোমাকে পেয়েছি
দেবো না কিছুতেই আর হারাতে
হ্যালো ২৪৪১১৩৯
দিন না দেকে বেলাকে একটিবার
মিটারে যাচ্ছে বেড়ে পাবলিক টেলিফোনে
জরু্রি খুব জরুরি দরকার
স্বপ্ন এবার হয়ে যাবে বেলা সত্যি
এতোদিন ধরে এতো অপেক্ষা
রাস্তার কতো সস্তা হোটেলে
ব্যস্ত ক্যাবিনে বন্দী দুজনে
রুদ্ধশ্বাস কতো প্রতীক্ষা
আর কিছু দিন তারপর বেলা মুক্তি
কসবার ঐ নীল দেয়ালের ঘর
সাদা-কালো এই জঞ্জালে ভরা মিথ্যে কথার শহরে
তোমার আমার নাল-নীল সংসার
চুপ করে কেন একি বেলা তুমি কাঁদছো
চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি সত্যি
কান্নাকাটির হল্লাহাটির সময় গেছে পেরিয়ে
হ্যালো তুমি শুনতে পাচ্ছো কি
এটা কি ২৪৪১১৩৯
বেলা বোস তুমি পারছো কি শুনতে
১০-১২ বার রং নাম্বার পেরিয়ে তোমাকে পেয়েছি
দেবো না কিছুতেই আর হারাতে
হ্যালো ২৪৪১১৩৯
দিন না দেকে বেলাকে একটিবার
মিটারে যাচ্ছে বেড়ে পাবলিক টেলিফোনে
জরু্রি খুব জরুরি দরকার
হ্যালো ২৪৪১১৩৯
হ্যালো ধুর ছাই হ্যালো।।

(০৩)

সময় গেলে সাধন হবে না


সময় গেলে সাধন হবে না
দিন থাকতে দ্বীনের সাধন কেন জানলে না
তুমি কেন জানলে না
সময় গেলে সাধন হবে না
জানো না মন খালে বিলে
থাকে না মিল জল শুকালে ।।
কি হবে আর বাঁধা দিলে
মোহনা শুকনা থাকে, মোহনা শুকনা থাকে,
সময় গেলে সাধন হবে না
সময় গেলে সাধন হবে না
অসময়ে কৃষি কইরে মিছা মিছি খেইটে মরে
গাছ যদি হয় বীজের জোরে ফল ধরে না
তাতে ফল ধরে না,
সময় গেলে সাধন হবে না ।।
অমাবস্যায় পূর্নিমা হয়
মহা জোগ সে দিনের উদয় ।।
লালোন বলে তাহার সময়
দনডোমো রয় না, দনডোমো রয় না,দনডোমো রয় না
সময় গেলে সাধন হবে না
দিন থাকতে দ্বীনের সাধন কেন জানলে না
তুমি কেন জানলে না
সময় গেলে সাধোন হবে না।।

(০৪)

খাঁচার ভিতর অচিন পাখি


খাঁচার ভিতর অচিন পাখি
কেমনে আসে যায়
তারে ধরতে পারলে মন বেড়ি
দিতাম পাখির পায়ে।
আট কুঠুরী নয়
দরজা আটা মধ্যে মধ্যে
ঝরকা কাঁটা
তার উপরে সদর কোঠা
আয়না মহল তায়ে।
কপালের ফের নইলে কি আর
পাখিটির এমন ব্যবহার
খাঁচা ভেঙ্গে পাখিয়ামার কোন খানে পালায়।
মন তুই রইলি খাঁচার আসে
খাঁচা যে তোর কাঁচা বাঁশের
কোন দিন খাঁচা পড়বে খসে
ফকির লালন কেঁদে কয়।

(০৫)

আমি অপার হয়ে বসে আছি


আমি অপার হয়ে বসে আছি
ও হে দয়াময়,
পারে লয়ে যাও আমায়।।
আমি একা রইলাম ঘাটে
ভানু সে বসিল পাটে-
আমি তোমা বিনে ঘোর সংকটে
না দেখি উপায়।।
নাই আমার ভজন-সাধন
চিরদিন কুপথে গমন-
নাম শুনেছি পতিত-পাবন
তাইতে দিই দোহাই।।
অগতির না দিলে গতি
ঐ নামে রবে অখ্যাতি-
লালন কয়, অকুলের পতি
কে বলবে তোমায়।।

(০৬)

মিলন হবে কত দিনে


মিলন হবে কত দিনে
আমার মনের মানুষের সনে।।
চাতক প্রায় অহর্নিশি
চেয়ে আছি কালো শশী
হব বলে চরণ-দাসী,
ও তা হয় না কপাল-গুণে।।
মেঘের বিদ্যুৎ মেঘেই যেমন
লুকালে না পাই অন্বেষণ,
কালারে হারায়ে তেমন
ঐ রূপ হেরি এ দর্পণে।।
যখন ও-রূপ স্মরণ হয়,
থাকে না লোক-লজ্জার ভয়-
লালন ফকির ভেবে বলে সদাই
(ঐ) প্রেম যে করে সে জানে।।

(০৭)

জাত গেল জাত গেল বলে


জাত গেল জাত গেল বলে
একি আজব কারখানা
সত্য কাজে কেউ নয় রাজি
সবি দেখি তা না-না-না।।
আসবার কালে কি জাত ছিলে
এসে তুমি কি জাত নিলে,
কি জাত হবা যাবার কালে
সে কথা ভেবে বল না।।
ব্রাহ্মণ চন্ডাল চামার মুচি
এক জলেই সব হয় গো শুচি,
দেখে শুনে হয় না রুচি
যমে তো কাকেও ছাড়বে না।।
গোপনে যে বেশ্যার ভাত খায়,
তাতে ধর্মের কি ক্ষতি হয়।
লালন বলে জাত কারে কয়
এ ভ্রম তো গেল না।।

(০৮)

পদ্মার ঢেউ রে 


পদ্মার ঢেউ রে
মোর শুণ্য হৃদয় পদ্ম নিয়ে যা যারে।।
এই পদ্মে ছিলো রে যার রাঙা পা
এই পদ্মে ছিলো রে যার রাঙা পা
আমি হারায়েছি তারে
আমি হারায়েছি তারে।।
মোর পরাণও বধু নাই
পদ্মে তাই মধু নাই, নাইরে
পরাণও বধু নাই
পদ্মে তাই মধু নাই, নাইরে
বাতাস কাঁদে বাইরে
সে সুগন্ধ নাইরে
মোর রূপেরও সরষিতে, আনন্দ মৌমাছি।
নাহি ঝংকারে রে।।
ও পদ্মা রে, ঢেউয়ে তোর ঢেউ উঠায় যেমন চাঁদেরও আলো।
মোর বধুয়ার রূপ তেমনি ঝিলমিল করে কৃষ্ণ-কালো।
ও সে প্রেমেরও ঘাটে ঘাটে বাঁশি বাজায়।
যদি দেখিস তারে দিস সে পদ্ম তার পায়।
বলিস কেন বুকে আশার দেয়ালে জ্বালিয়ে
চলে গেলো চির অন্ধকারে।।

(০৯)

ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে


ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে
আমার নামটি লিখো-তোমার
মনের মন্দিরে।
আমার পরানে যে গান বাজিছে
তাহার তালটি শিখো-তোমার
চরণমঞ্জীরে।।
ধরিয়া রাখিয়ো সোহাগে আদরে
আমার মুখর পাখি তোমার
প্রাসাদপ্রাঙ্গণে।
মনে করে সখী, বাঁধিয়া রাখিয়ো
আমার হাতের রাখী তোমার
কনককঙ্কণে।।
আমার লতার একটি মুকুল
ভুলিয়া তুলিয়া রেখো তোমার
অলকবন্ধনে।
আমার স্মরণ-শুভ-সিন্দুরে
একটি বিন্দু এঁকো-তোমার
ললাটচন্দনে।
আমার মনের মোহের মাধুরী
মাখিয়া রাখিয়া দিয়ো-তোমার
অঙ্গসৌরভে।
আমার আকুল জীবনমরণ
টুটিয়া লুটিয়া নিয়ো-তোমার
অতুল গৌরবে।।
আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদলদিনে
জানি নে, জানি নে কিছুতে কেন
যে মন লাগে না ॥
এই চঞ্চল সজল পবন-বেগে উদ্ভ্রান্ত
মেঘে মন চায়
মন চায় ওই বলাকার
পথখানি নিতে চিনে॥
মেঘমল্লারে সারা দিনমান
বাজে ঝরনার গান।
মন হারাবার আজি বেলা, পথ ভুলিবার
খেলা- মন চায়
মন চায় হৃদয় জড়াতে কার চিরঋণে


(১০)

আমার ও পরান ও যাহা চায়


আমার ও পরান ও যাহা চায়
তুমি তাই , তুমি তাই গো
আমার ও পরান ও যাহা চায়
তোমা ছাড়া আর এ জগতে
মোর কেহ নাই কিছু নাই গো
আমার ও পরান ও যাহা চায়
তুমি সুখ ও যদি নাহি পাও
যাও সুখের ও সন্ধানে যাও …(২ বার)
আমি তোমারে পেয়েছি হৃদয় ও মাঝে
আর ও কিছু নাহি চায় গো ও
আমার ও পরান ও যাহা চায়
তুমি তাই তুমি তাই গো
আমার ও পরান ও যাহা চায়
আমি তোমার ও বিরহে
রহিব বিলীন ও
তোমাতে করিব বাস
দীর্ঘ দিবস ও , দীর্ঘ রজনি
দীর্ঘ বরস ও মাস … (২ বার)
যদি আর ও কারে ভালবাসো
যদি আর ও ফিরে নাহি আসো … (২ বার)
তবে তুমি যাহা চাও
তাই যেন ও পাও
আমি যত ও দুঃখ পাই গো
আমার ও পরান ও যাহা চায়
তুমি তাই তুমি তাই গো
আমার ও পরান ও যাহা চায়
তোমা ছাড়া আর এ জগতে
মোর কেহ নাই কিছু নাই গো
আমার ও পরান ও যাহা চায়

(১১)

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন


যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে, 

আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে, 
চুকিয়ে দেব বেচা কেনা, 
মিটিয়ে দেব গো, মিটিয়ে দেব লেনাদেনা, 
বন্ধ হবে আনাগোনা এই হাটে- 
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে, 
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে 

যখন জমবে ধূলা তানপুরাটার তারগুলায়, 
কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়, আহা, 
ফুলের বাগান ঘন ঘাসের পরবে সজ্জা বনবাসের, 
শ্যাওলা এসে ঘিরবে দিঘির ধারগুলায়- 
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে, 
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে 

তখন এমনি করেই বাজবে বাঁশি এই নাটে, 
কাটবে দিন কাটবে, 
কাটবে গো দিন আজও যেমন দিন কাটে, আহা, 
ঘাটে ঘাটে খেয়ার তরী এমনি সে দিন উঠবে ভরি- 
চরবে গরু খেলবে রাখাল ওই মাঠে. 
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে, 
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে 
তখন কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি. 
সকল খেলায় করবে খেলা এই আমি - আহা, 
নতুন নামে ডাকবে মোরে, বাধবে নতুন বাহু-ডোরে, 
আসব যাব চিরদিনের সেই আমি. 
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে, 
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে  ।। 

শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৬

নিরবেই চলে গেল শিল্পীআব্বাস উদ্দিনের জন্মদিন।


শিল্পী


‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’, ‘ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ এলো রে দুনিয়ায়’ ‘তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে’ কালজয়ী এ গানগুলোর কণ্ঠশিল্পী আব্বাসউদ্দীনের জন্মদিন নীরবেই চলে গেল। হিন্দুত্ববাদী শিল্প-সংস্কৃতি-সংগীতের রমরমা বাজারে ইসলামি গানের মাধ্যমে ‘মুসলিম জাগরণ সৃষ্টি’ করা এই শিল্পীর ১১৫তম জন্মদিন ছিল ২৭ অক্টোবর। ১৯০১ সালে তৎকালীন ভারতের কুচবিহার জেলার তুফানগঞ্জ মহকুমার বলরামপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কোন্ গান করেননি? আধুনিক গান, স্বদেশী গান, ইসলামি গান, পল্লীগীতি, জারি, সারি, ভাটিয়ালি, মুর্শিদী, বিচ্ছেদ, দেহতত্ত্ব, মর্সিয়া, পালা গান, উর্দুগান সবই গেয়েছেন দরাজ গলায়। তৎকালীণ সময় মুসলমানদের প্রতিকূল পরিবেশে ইসলামি গান উপমহাদেশে ছড়িয়ে দিয়ে মুসলমানদের সংস্কৃতির বারতা তুলে ধরেছেন। এখনো ঈদুল ফিতরের চাঁদ রাতে ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে ... ’ গান শুনতে উন্মুখ হয়ে থাকেন কোটি কোটি মুসলমান। বাংলা গানের মুসলিম রেঁনেসার এই শিল্পী কি অবহেলিতই থাকবেন? তাঁর জন্মদিন পালনে কোথাও কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে বলে শোনা যায়নি। অথচ অন্যান্য কবি-শিল্পীদের স্মৃতি ধরে রাখতে কতই না আয়োজন। আব্বাসের জন্মদিনে বিজাতীয় সংস্কৃতির ধারক-বাহকরা নীরব থাকবেন স্বাভাবিক। কিন্তু জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল, ইসলামি ধারার দল ও সামাজিক সংগঠন নীরব কেন? 

সংগীতাঙ্গনে ইসলামি ধারার গানকে মূলধারায় নিয়ে আকাশছোঁয়া জনপ্রিয় করেছেন যে শিল্পী সে শিল্পীর জন্মবার্ষিকী নীরবে চলে গেল? উপনিবেশিক শাসনামলে এ অঞ্চলের মানুষ যখন নানান কিচিমের গানের প্রতি ঝুঁকে পড়েন; তখন মুসলমানরাও সেই শ্রোতে গা ভাসিয়ে দেন। দেশজ শিল্প-সংস্কৃতিতে গজল, কাওয়ালি, হামদ-নাত ছাড়া মুসলিম সম্প্রদায়ের আত্ম-পরিচয়ের তেমন কিছুই ছিল না। তখন আব্বাসউদ্দীন তার কণ্ঠে মুসলিম হৃদয়ে ইসলামি গানের নবজাগরণ সৃষ্টি করলেন। কবি নজরুল ইসলাম লিখতেন আর আব্বাসউদ্দীন তা গাইতেন। মুসলিম সম্প্রদায়ের যখন সাংস্কৃতি জগতে সুর-তরঙ্গ লহরিতে একেবারেই অচেনা অবস্থা তখন কাজী নজরুল ইসলামের লেখা ও সুর করা রোজা, নামাজ, হজ, জাকাত, শবেবরাত, ঈদ, ফাতিহা, নাতেরসূল, ইসলামি গজল প্রভৃতি গান গেয়ে আব্বাসউদ্দীন বাঙালী অঞ্চলে ইসলামের জাগরণ সৃষ্টি করেন। তখন থেকে শুরু হয় সংস্কৃতিতে মুসলিম সমাজের জাগরণ। ইংরেজ শাসনামলে মুসলমানদের জন্য ছিল বৈরি পরিবেশ। সংগীতে মুসলিম সম্প্রদায়ের তেমন সমৃদ্ধ গানও ছিল না। ওই বৈরী সময়ের বিজাতীয় সংস্কৃতির শ্রোত ঠেলে উত্থান ঘটে আব্বাসউদ্দীনের। উপমহাদেশে ইসলামি সঙ্গীতের খুব একটা গ্রহণযোগ্যতা-প্রচলন ছিল না। এমনিতেই মুসলমানদের জন্য প্রতিকূল পরিবেশ; তারপর বড় চ্যালেঞ্জ ছিল মুসলিমদের ধর্মীয় ভাবাদর্শ। মুসলিম সমাজে কেউ কেউ ‘গান হারাম’ এমন প্রচারণা করতেন। আব্বাসউদ্দীন মুসলমান নাম নিয়েই গান শুরু করেন এবং তার বিশেষ গায়কী ঢং ও সুরেলা কণ্ঠ প্রতিকূল অবস্থাকে অনুকূলে নিয়ে আসেন ইসলামি গান। ইসলামি গান যে এতো জনপ্রিয় হতে পারে আব্বাসউদ্দীনের যুগের আগে মানুষের মধ্যে সে ধারণাই ছিল না। আধুনিক, ইসলামি গান, পল্লীগীতি সব গানই তার কণ্ঠে ছিল। তবে পল্লীগীতিতে মৌলিকতা বেশি। তাঁর দরদী কণ্ঠে বিশুদ্ধ উচ্চারণ ভঙ্গি, অনুপম সুরেলা কণ্ঠ, তাল-লয় ও মাত্রাজ্ঞান সমন্বিতের মাধ্যমে নতুন ব্যঞ্জনা লাভ করে। ইসলামী গান যে অন্য যে কোনো গানের চেয়ে মানুষের হৃদয়ে বেশি নাড়া দেয় সেটা তিনি প্রমাণ করেছেন। ধরলা, তিস্তা ব্রহ্মপুত্রসহ রংপুর অঞ্চলের নদী অববাহিকার মানুষের প্রাণের গান ভাওয়াইয়া। এই ভাওয়াইয়া ওই অঞ্চলের মানুষের সংস্কৃতিকে করেছে বেগবান। দুঃখ-বেদনা, সুখ-সমৃদ্ধি সর্বোপরি যাপিত জীবন উঠে এসেছে ভাওয়াইয়া গানের কথায়-সুরে। তার রচিত ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই...’ গান রচনার কাহিনী গত মাসে কুড়িগ্রামের চিলমারীতে শুনেছি। কত বড় মাপের শিল্পী হলে তাৎক্ষণিক এমন গান লেখা সম্ভব! গানের মাধ্যমে মুসলিম সমাজে জাগরণ সৃষ্টিকারী সেই আব্বাসউদ্দীনকে অবহেলা কি জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মুল্যবোধে বিশ্বাসী মানুষের আত্মপ্রবঞ্চনা নয়? সনাতন ধর্মের কালচারের সুতিকাগার কোলকাতা মহানগরীতে শিল্পী জীবন শুরু করেন আব্বাসউদ্দীন। অন্যান্য শিল্পীদের ভিড়ে পাত্তা পাচ্ছিলেন না। নানা প্রতিকূলতায় কলকাতার গ্রামোফোন কোম্পানিতে দুটি আধুনিক গান রেকর্ড করেছিলেন বিমল দাশগুপ্তের সহায়তায়। শৈলেন রায়ের লেখা গান দুটি হলো ‘কোন বিরহীর নয়ন জলে বাদল ঝরে গো’ এবং ‘স্মরণ পারের ওগো প্রিয়’। অতপর লোকগীতির পাশাপাশি ইসলামি গান সংযোজন করেন। ইসলামি গান গেয়ে আব্বাসউদ্দীন তৎকালে সংস্কৃতিক অঙ্গণে অনুপস্থিত বাঙালি মুসলমানের দীনতা ঘুচান। অথচ ইসলামি গান মানুষ পছন্দ করনে না এ কারণে তার গান রেকর্ড করতেই চাইতো না কোম্পানি। কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন সুর দিয়েছেন আর আব্বাসউদ্দীন বলিষ্ঠ দরদি কণ্ঠে সে গান গেয়েছেন। ওই গান মুসলিম সমাজকে নাড়াই দেয়নি; অন্যান্য ধর্মালম্বীদের হৃদয় জয় করেছে। তিনি পল্লীগীতি, ভাওয়াইয়ার পাশাপাশি ৮৪টি ইসলামি গান রেকর্ড করেন। কাজী নজরুলের গান তার কণ্ঠের মাধ্যমে তৎকালীন সময়ে মুসলিম রেনেসাঁর সূত্রপাত ঘটে। যার ইসলামী গান এখনো বাংলার মানুষের হৃদয়ে আলোড়ন তুলছে সেই শিল্পী প্রতি আমাদের কেন এই অবহেলা?

স্টালিন সরকার 
Copyright Daily Inqilab

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

About

About Me

মোট দর্শক

ফেসবুকে আমরা