বেলজিয়াম
সরকার এক মুসলিম নেতাকে মৃত্যুদণ্ড দিলো। মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আগে এক পাদ্রীকে
পাঠানো হল তাকে সংশোধনের জন্য। যেন পাদ্রী তাকে বুঝিয়ে খ্রিস্ট ধর্মের দীক্ষা দিতে
পারে। কিন্তু ঘটনা ঘটে গেলো উল্টো। মৃত্যুর আগে সেই মুসলিম নেতা পাদ্রীকেই ইসলাম গ্রহণ
করিয়ে যান। এক মুসলিমের মৃত্যুর আগে আরেকজন মুসলিম তৈরী করে গেলেন।
খৃষ্টানদের
সাথে যুদ্ধারত অবস্থায় এক মুজাহিদ গ্রেফতার হন। অন্তরিন অবস্থায় তাকে হাত পা বেঁধে
ডানিয়ুব নদের মধ্যবর্তী উপত্যকায় পাঠানো হয়। সেখানে তার ঈমানের আলোকচ্ছটা এমনভাবে
ছড়িয়ে পড়ে যে অল্পদিনের মধ্যেই সেখানকার ১২ হাজার লোক ইসলামে দীক্ষা গ্রহণ করে। এই
মুজাহিদের একক প্রচেষ্টায় পূর্ব ইউরোপে ইসলামের আলো ছড়িয়ে পড়ে।
উনিশ
শতকের শুরুর দিকে টিনাভেলি নামক অঞ্চলে এক শিক্ষাপ্রদ ঘটনা ঘটে। সেখানে সানার নামক
এক সম্প্রদায় বাস করত। তৎকালে এই সম্প্রদায়কে নিচু শ্রেণীর মনে করা হত। এরা
নিজেদের প্রতিভা ও যোগ্যতার বলে যথেষ্ট বিত্তশালী হয়ে ওঠে এবং শিক্ষা ও
আচার-অনুষ্ঠানে হিন্দুদের থেকেও উচ্চমর্যাদার অধিকারী হয়। কিনুত তা সত্ত্বেও
হিন্দুরা তাদের অবজ্ঞা করতেই থাকে। এতে হিন্দু ধর্মের প্রতি সানার সম্প্রদায়ের বিরূপ
ধারণার সৃষ্টি হয়। একদিন কতিপয় সানারের মন্দিরে প্রবেশ নিয়ে হিন্দুরা তাদের প্রচুর
পরিমাণে প্রহার করে। এতে গোটা সানার সম্প্রদায় ইসলাম গ্রহণ করে। প্রায় ৬শ সানার
সেদিন ইসলাম গ্রহণ করে। আশেপাশের সানাররাও যখন এ খবর শুনতে পেলো তখন তারাও ইসলাম
গ্রহণ করে।
উনিশ
শতকের এক যুগ পরে সীমান্তের মুজাহিদিনদের সাথে সম্পর্ক রাখার কারণে তাকে আন্দামানে
নির্বাসিত করা হয়। সেখানি গিয়ে তিনি বহু সংখ্যক কয়েদীকে মুসলিম বানিয়ে নেন। তিনি
হলেন, মাওলানা জাফর থানেশ্বরী রহ.।
সাইয়েদ
মুজাদ্দিদ সরহিন্দী রহ. সম্রাট জাহাঙ্গীরের কারাগারে দুইবছর কাটিয়েছেন। এর মধ্যে
তিনি পুরো সময়টাই ইসলাম প্রচারের কাজে ব্যবহার করেছেন।
তাতাররা
(জেঙ্গিস বাহিনী) যখন বাগদাদে গণহত্যা চালাচ্ছিল, ঠিক তখনই অন্যদিকে মুসলিম নারীরা
তাতারদের ইসলামে দীক্ষা দিচ্ছিলেন। যে অঞ্চল তাতার বাহিনী দখল করত, সে অঞ্চলের পুরুষ
শিশুদের হত্যা এবং নারীদেরকে ধরে নিয়ে যেত। এমনই একদল মহিলাকে দাসী বানিয়ে ধরে
নিয়ে যায় গাজান শাহের বাহিনী। ঘটনাক্রমে গাজান
শাহের ভাই অল জাতিভ খান এক মুসলিম নারীকে বিয়ে করেন। পরে তার স্ত্রীই তাকে মুসলিম
বানিয়েছিলেন। চুগতাই বংশ মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু ছিল। কিন্তু হালাকু খানের
মুসলিম স্ত্রীই এই বংশের মধ্যে ইসলামী জ্ঞানের বিস্তার ঘটান। পরবর্তীতে বারকে খান
ইসলাম গ্রহণ করলে চেঙ্গিস বংশে ইসলাম বিস্তারের বিপ্লবিক পরিবর্তন হয়।
৫ম শতকে
লাহোরে এক সাধকের আগমণ ঘটে। তিনি প্রতিদিন পাঞ্জাব শহরে ওয়াজ করতেন। হাজার হাজার
মানুষ তার ওয়াজ শুনতে আসতেন। কথিত আছে যে ব্যক্তি একবার তার মূল্যবান ওয়াজ শুনতেন
তিনি ইসলাম গ্রহণ না করে পারতেন না। সেই সাধক হচ্ছেন পাঞ্জাবে সর্বপ্রথম ইসলাম
প্রচারক সাইয়েদ ইসমাঈল বুখারী।
ইউরোপীয়
পর্যটকের ভাষ্যঃ “নাইজেরিয়া নদীর কিনার দিয়ে যখন আমি মধ্য-আফ্রিকার দিকে রওনা
হলাম, তখন প্রথম দু’শো মাইল পর্যন্ত আফ্রিকার উপজাতীগুলোর অসভ্যতা , বর্বরতা আর
নরখাদকতা সম্পর্কে আমার যে ধারণা ছিল তা বদলানোর কোনো প্রয়োজন বোধ করিনি। কিন্তু
আমি যখন মধ্য সুদানের নিকট পৌঁছুলাম, তখন উপজাতীয় গোত্রগুলোর জীবনে আমি প্রগতির
নিদর্শনাবলী দেখতে পেলাম। যা দেখে আমার ধারণা পালটে যেতে লাগলো। আমি দেখলাম,
সেখানে মানুষ খাওয়ার প্রবণতা নেই, মূর্তিপূজারও অস্তিত্ব নেই। মদখোরী নেশাখোরীও
বিলুপ্ত প্রায়। সকল গোত্রের লোকেরা কাপড় পরে। কাপড়-চোপড় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখে
এবং আচার আচারণে ভদ্রতা লক্ষ্য করলাম। দেখে মনে হচ্ছে তাদের নৈতিক মান তাদের
অন্যান্য গোত্র থেকে অনেক উচ্চমানের। তাদের সবকিছুই প্রগতিশীল। নিগ্রো প্রকৃতি যেন
কোনো উন্নততর প্রকৃতিতে রূপান্তরিত হচ্ছে আর এসবই হচ্ছে ইসলামের কল্যাণে। “লোকোজা”
নামক জায়গাটা অতিক্রম করার পর আমি মূল ইসলামী প্রচার কেন্দ্রে গিয়ে পৌঁছুলাম এবং
সেখানে এক অতি উচ্চাঙ্গের শৃংখলাবদ্ধ প্রশাসন সক্রিয় দেখলাম। চারদিকের লোক বসতিতে সর্বত্র সভ্যতার নিদর্শন
পরিস্ফুটিত। ব্যবসা বানিজ্য, শিল্প ও কারিগরির ব্যাপক প্রচলন ঘটেছে এবং আমার মনে
হচ্ছিল, আমি যেন একটি সুসভ্য দেশে এসে উপস্থিত হয়েছি”।
এই
বর্জটকের বক্তব্যে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, আফ্রিকার অসভ্য নিগ্রো জাতীকে মুসলিমরাই
সুসভ্য করেছে। আলো দেখিয়েছে। আর এই আলোকিত পথ থেকে মুসলিমরা আজ নিজেরাই জ্ঞানহীন,
বিচ্যুত।
তখন বনী
উমাইয়ার শাসনামল। চীনের ক্ষমতায় সোয়ানসোং। জৈনক ষড়যন্ত্রকারী তাকে সিংহাসনচ্যুত
করে। তার পুত্র খলিফা মানসুরের কাছে পত্র প্রেরণ করে সাহায্যের আবেদন করে। মানসুর চার
হাজার সৈন্য প্রেরণ করেন সহায়তার জন্য। তাদের সহযোগিতায় সোয়ানসোং আবার সিংহাসন
ফিরে পায়। তারপর এই সৈন্যরা আর দেশে ফিরে যায় নি। চীনেই বসবাস করতে থাকে এবং ইসলাম
প্রচারের কাজে নিজেদের নিয়োজিত রাখে। তাদের প্রচেষ্টায় কয়েক শতাব্দীর মধ্যে সমগ্র
ক্যান্টেম অঞ্চল ইসলামের আলোয় আলোকিত হয়।
বিভিন্ন
দ্বীপপুঞ্জে ইসলাম প্রচারেও মুসলিমগণ ছিলেন অগ্রগামী। সুমাত্রা, জাভা, রাডান,
মালাক্কা, বোর্ণিও, সিলিবিস, ফিলিপাইন, নিউগিনিতেও ইসলাম প্রচারেও সচেষ্ট ছিলেন
মুসলিমগণ।
মালাক্কা
দ্বীপপুঞ্জ। ওয়াতো মোল্লা হোসাইন জাভা থেকে মালাক্কায় বসতিস্থাপন করেন। প্রতিদিন
সকালে সুমধুর কণ্ঠে কুরআন পড়তেন। তাঁর কুরআন তেলাওয়াত শুনে পৌত্তলিকরা মোহিত হয়ে
তাঁর কাছে ভীড় করত। আর তিনি তাদেরকে ইসলামে দীক্ষিত করে নিতেন। এমন কী ১৪৯৫ স্বয়ং রাজা ইসলাম গ্রহণ করেন। সেই সময় একেকজন মুসলিম
মানেই একেকজন দায়ী। তখন সাধারণ মুসলামানের মধ্যে ইসলাম প্রচারের এমন প্রেরণা জাগে
যে, অফিসের কর্মচারীদের থেকে শুরু করে মুদিদোকানীও একেকজন দায়ী হিসেবে কাজ করতেন। লাহোরের
আঞ্জুমানের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, তৎকালে স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষক, সরকারী
কর্মচারী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এমনকী উট গাড়ির গাড়োয়ানও ইসলাম প্রচারের কাজে নিজেকে
ব্যস্ত রাখতেন।
অস্রের
জোরে যেসকল জায়গা বিজিত হয়েছিল, তার অধিকাংশ দেশ থেকেই ইসলাম আজ প্রায় বিলুপ্ত।
সেক্ষেত্রে স্পেনকে এগিয়ে রাখা যায়। সেইসময়ে স্পেন ছিল জ্ঞানচর্চার
সর্বৎকৃষ্ট আবাস্থল। এখন স্পেনে ইসলামের সূর্য অস্তমিত। কিন্তু আফ্রিকাঞ্চলে
ইসলামের আলো এখনো দীপ্তমান। এ থেকেই বোঝা যায়, দ্বীনি দাওয়াত এবং প্রশিক্ষণের
মাধ্যমে মানুষের মধ্যে আলো দিলে, সেই আলো কোনক্রমেই বিলুপ্ত করা যায় না। বরং
প্রদীপের মত এক বাতি থেকে আরেক বাতিতে আলো ছড়তেই থাকে।
শতাব্দীর
পর শতাব্দী অতিক্রান্ত হয়ে, ইসলাম আজ এই পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। মুসলিমরা হারিয়েছে
তাঁর সালতানাত। ইয়াহুদি খ্রিস্টানরাই এখন সারাবিশ্ব শাসন করছে। এর মূল কারণ তারা
তাদের রীতি অনুযায়ী দাওয়াতে তাবলীগের কাজ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে। জ্ঞান চর্চা
ছেড়ে দিয়েছে। সাধারণ মুসলিমরা মনে করে, কুরআন হাদিস পড়া আলেম ওলামাদের কাজ। এগুলো
বোঝা আমাদের মত সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব না। তাই যতদূর সম্ভব প্রয়োজনে তাঁদের
(আলেমদের) থেকে একটু আকটু জেনে নিলেই হবে।
কিন্তু
কুরআন বলে ভিন্ন কথা। ইসলামী সমাজ বিনির্মানের দায়িত্ব- ব্যক্তির, দলের, সমাজ এবং
রাষ্ট্রের।
আল্লাহ
বলেন, সেই ব্যক্তিই উত্তম যিনি-
১. মানুষকে
আল্লাহর দিকে ডাকেন,
২. নেক
কাজ করেন
এবং ৩.
ঘোষণা করেন, আমি একজন মুসলিম”।
আর
এইসময়ের মুসলিমরা ১ ও ২ নং কাজতো করেই না বরঞ্চ নিজেদেরকে মুসলিম হিসেবে পরিচয়
দিতেও যেন লজ্জাবোধ করেন। অতচ একজন মুসলিম কতবড় ভাঙ্গবান যে আল্লাহ তাকে মুসলিম হিসেবে দুনিয়ায়
পাঠিয়েছেন।
দাওয়াতে
তাবলীগ বলতে এখন অনেকেই তাবলীগ জামাতকেই বুঝে থাকে। যা গোমরাহির ফল। তারা একধরণের
মানুষের মধ্যে দ্বীনি দাওয়াতের কাজ করে থাকেন। যাতে অতিসাধারণরা নামাজ পড়া শিখছেন,
ইসলামের প্রাথমিক বিষয়াদি জানতে পারছেন। কিন্তু এটা পরিপূর্ণ কোনো দ্বীনি দাওয়াতের
প্লাটফর্ম নয়। শুধু ফজিলতের কিতাব পড়েই যদি মানুষকে ইসলামের পথে আনা যেত তাহলে
৬৬৬৬টি আয়াতের এত বড় একটি গ্রন্থ প্রেরণের কোনো প্রয়োজন মনে করতেন না আল্লাহ
রাব্বুল আলামীন। পেটগুলো লাউ আর তরমুজের সাইজ বানিয়ে দ্বীনি দাওয়াতের কাজ করা
গেলে, রাসূল সিয়াবে আবু তালেবে বন্ধি জীবনযাপনও করতেন না, তায়েফে পাঁথরের আঘাতও
খেতেন না, অহুদের ময়দানে দাঁত ভাঙতেন না। আর দ্বীনি দাওয়াতের জন্য ইসলামের
পরিপূর্ণ জ্ঞান অবশ্যই থাকতে হবে। যাতে ভুল কোনো যুক্তি বা তথ্য না পেশ করা
হয়।
বেশির
ভাগ তাবলীগ জামাতী ভাইদের দেখেছি, তাফসির পড়তে অনাগ্রহী। কেউ কেউ আবার বলে থাকেন,
সাধারণ মানুষ কুরআনের তাফসির পড়লে গোমরাহ হয়ে যাবে।
ইসলামী
আন্দোলনের ভাইয়েরা তাবলীগ জামাতকে কিছুক্ষেত্রে অবজ্ঞার চোখেই দেখে থাকেন। আমার
আলোচিত উপরের বিষয়গুলো নিয়ে। যেকারণে তাবলীগ জামাতের ভাইয়েরাও ইসলামী আন্দোলন কী
এবং কেন এটা বোঝেন না।
এই বিষয়ে
আমার মতামতঃ
১.
ইসলামী আন্দোলনের একটি ইউনিট তাবলীগ জামাতের সাথে কাজ করতে পারেন। যেখানে বড় একটি
দাওয়াতী ক্ষেত্র পাওয়া যাবে। আর নিজেদের মতামত ব্যক্ত করার সুযোগও আসবে। সাধারণ
মানুষের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত হতে পারার থেকে আর কী বড় হতে পারে।
২. এতদিন
তাবলীগ জামাত এবং ইসলামী আন্দোলন বলা যায় প্রায় দুই মেরুতে। যদিও তাবলীগ জামাত
একটি সুফী ধারার আন্দোলন। তারপরেও একসাথে দ্বীনের কাজ করলে কিছু সংখ্যক মানুষ তৈরী
হয়ে যাবেন ওখানেও। এতদিন যেখানে প্রায় শূন্যের কোটায়। দ্বীনি আন্দোলন যদি তাদেরকে না বুঝানো হয়, তাহলে
তারা তো ভুল বুঝবেনই।
আমরা
যেন মুনাফিকী নীতি অবলম্বন করেছি। মুনাফিকী নীতি হচ্ছে- যখন মানুষ, তাঁর ঈমান ও
দ্বীন এর বিপরীত ধরণের জীবন ব্যবস্থাকে নিজের উপর প্রভাবশালী ও সুপ্রতিষ্ঠিত মনে
করে সন্তুষ্ট হয় এবং তার আমূল পরিবর্তন করে তথায় দ্বীন ও জীবন ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠা
করতে আদোও চেষ্টা করে না। বরং সাম্প্রতিক প্রতিষ্ঠিত ফাসেকী ও খোদাদ্রোহীমূলক জীবন ব্যবস্থাকে নিজের অনূকল
মনে করে তার মধ্যে নিজের মঙ্গলময় ভবিষ্যতের চিন্তায় মশগুল থাকে।
যতদিন
পর্যন্ত আমরা এই মুনাফিকি আচরণ থেকে বের হতে না পারব ততদিন, দ্বীনের আলো আমরা দেখতে
পাবো না। দ্বীন প্রচার ও প্রসারে পেরেশান না হলে কীভাবে আর দ্বীনের শিখা ছড়াবে।
বাংলাদেশসহ
সমগ্র বিশ্বেই খ্রিস্টানদের মিশনারী কাজ করে। বাংলাদেশে খ্রিস্টান ধর্মালম্বীদের
পরিচালিত ১২০০টি কিন্ডার গার্টেন, ২০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৭০টি জুনিয়র স্কুল, ১২টি
মাধ্যমিক ও কলেজ, ৫টি ভোকেশনাল, ২টি ডিগ্রী কলেজ, ১টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। চিন্তা
করতেই গা শিউরে ওঠে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে যদিও খ্রিস্টান বানানো হয় না, কিন্তু
তারা দ্বীন বিমুখ হয়ে গড়ে ওঠেন। এটাই বা কম কিসে? অতচ এতগুলো ইসলামী আন্দোলনের
দলগুলোর প্রতিষ্ঠানও নেই। তাহলে কীভাবে ইসলামের বিস্তার ঘটবে? যেখানে
মানুষ তৈরী হয় সেখানেই দ্বীন নেই। তাহলে কীভাবে দ্বীনের প্রসার হয়। ড. আসগর আলী
সাহেবের একটি প্রবন্ধ পড়েছিলাম, “শিক্ষকতায় ইসলাম প্রচার করে ধন্য হোন”। ভালো
লেগেছে। শিক্ষকরা উদ্ধুদ্ধ হবেন। সাপ্তাহিক
সোনার বাংলার গত ঈদ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। একটি প্রতিষ্ঠানে আমরা একজন যোগ্য
দায়ী নিয়োগ করতে পারলে, টোটাল প্রতিষ্ঠানের রূপ পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু আমরা
দ্বীনি আন্দোলনে এইকাজটা করতে পিছিয়ে পড়েছি। প্রত্যেক শহর উপশহরে কিন্টার গার্টেন,
মডেল মাদ্রাসা খুললে উচ্চবিত্তরাও এই সকল প্রতিষ্ঠানে তাদের ছেলেমেয়েদের পড়তে
দেবেন। তখন ইচ্ছে মত তাঁদের কুরআনের আলোতে আলোকিত করা সম্ভব হবে। এইসব কাজ
প্রমাণিত। যেসকল এলাকায় এইরকম প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিনে
দিনে বাড়ছে। শুধু রয়েছে কাজের অভাব।
একজন
মসজিদের ইমামের মাধ্যমে একটি সমাজের পরিবর্তন খুব সহজেই হতে পারে। কিন্তু অধিকাংশ
মসজিদের ইমামই সবে বরাত সবে কদরের ফজিলতের থেকে বেশি কিছু আলোচনা করেন না। সমাজের
সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে ধারাবাহিকভাবে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা খুব কম আলেমই করে থাকেন।
যা শুধু হতাশায় বাড়ে। আমি জীবনে এক জুম্মায় বড় ভাইয়ের অনুপস্থিতে আলোচনা
রেখেছিলাম। সেদিন বুঝে ছিলাম। ইস আর কিছু না করলে শুধু মাদ্রাসা পড়ে এই মসজিদের
ইমাম হতে পারলেও অনেক দাওয়াতি কাজ করতে পারতাম। তখন মনে হয়, মাদ্রাসা না পড়ে ভুল
হয়ে গেছে।
এইরকম
অনেক ক্ষেত্র রয়েছে দাওয়াতী কাজের। কাজের ক্ষেত্র ও জায়গা অনেক। কিন্তু কর্মীর
খুবই অভাববোধ হয়। কারো কাজের সুযোগ আছে, কিন্তু কাজ করে না। আবার কারো কাজের সুযোগ
নেই কিন্তু মানসিকতা ঠিকই আছে। আল্লাহ তাঁদের সুযোগ দেননি। ফজরের নামাজের জন্য অজু
করতে গিয়ে দেখি বাথরুমের বদনাটি পূর্ণ হয়ে গেছে। অতচ গতরাতে আমি এটা খালি
রেখেছিলাম। পরে খেয়াল করলাম, একফোটা একফোটা করে পানি পড়ছে টেপ থেকে। তাতে বুঝতে
পারলাম। সারারাত ধরে এইরকম ফোটায় ফোটায় পানি পরেই বদনাটা পূর্ণ হয়ে গেছে। তাই
দ্বীনের কাজেও সার্বিকভাবে ধারাবাহিক কাজ করতে পারলেই দ্বীনি আন্দোলনে সফলতা পেতে
পারি। হঠাৎ হঠাৎ ঝড় হাওয়ার মত কাজ করে
আবার উধাও হয়ে গেলে কাজ হবে না। তিলে তিলে গড়তে হবে দ্বীনের ভীত।
রেফারেন্সঃ
ইসলামের শক্তির উৎস, দাওয়াত ও কর্মনীতি, ইসলামিক টাইমস।
আবদুল হাকিম
সিরাজগঞ্জ
১০.১১.২০১৮
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন