রবিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৯

Filled Under: ,

ইতিহাসের এপিট ওপিট


ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনে মুসলমানদের অবদান 

বেশি দূরে নয়, এইতো ১৯২১ শতকের কথা, আসফ আলী তখন মৃত্যু শয্যায়। নরম গলায় বলছেন, আমার আর লড়াই করা হলো না। আমি চললাম আল্লাহর ডাকে। তবে ইংরেজের সঙ্গে লড়াই করার জন্য আমার ছেলে আসাফ আলীকে রেখে গেলাম। তার সঙ্গেও দেখা হলো না, কারণ সে এখন জেলখানায়। জেল থেকে বেড়িয়ে সে মৃত্যু পর্যন্ত লড়াই করবে।

ফাঁসির মঞ্চে যুবক কোরআন হাতে নিয়ে হেসে হেসে কোরআনের অংশবিশেষ আবৃত্তি করছে। একটু পরেই তার ফাঁসি, সেদিকে তার কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। ভীত নয় সে। অবশেষে বীরের মত প্রাণ দিল। ফাঁসির পর যে কারণে তার ওজন বেড়ে গেইয়ছিল। তার নাম আসফাকুল্লাহ। যে আসফাকুল্লাহ ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনে জীবন দিয়েছিল।

এইরকম অনেক আসফ আলী আর আসফাকুল্লাহর ইতিহাসে ঠাই হয় নি। আমরা চিনি ক্ষুদিরাম, প্রফুল্লচাকী, ভগত সিং আর রামপ্রসাদকে। তাদেরকেই চিনি না যারা ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনে সামনের কাতারে ছিল। ১৯১৭ সালে রামচন্দ্র ভরদ্বাজকে গুলি বিদ্রোহী বলে গুলি করে হত্যা করা হয়। আমরা রামচন্দ্রকে চিনি। কিন্তু রামচন্দ্র যে আন্দোলনের শরিক হয়ে নিহত হয়েছে, সেই আন্দোলনের যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, সে আব্দুর রহিম, আল্লাহ বখশ ও গোলাম রব্বানীকে চিনি না।
সেই গোলাম জিলানীর কথা বলি। ২৭ বছরের টকবগে যুবক। গান্ধীর একান্ত ভক্ত। বি.এ পাশ করে শুধু রাজনীতিই করেছেন। ১৯৩২ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে শেষে অমানসিক অত্যাচারে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর উপর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন। এরপর ইংরেজ সরকার পক্ষ থেকে মুচলেকা দিয়ে মুক্তির কথা জানানো হয়। শর্ত হলো, “আমার অন্যায় হয়েছে এবং ইংরেজদের বিরুদ্ধে আমি আর আন্দোলন করব না”। তার পিতাকে জিজ্ঞেস করলে বীরপুত্রে বীর পিতা মুচলেকা দিয়ে ছেলের মুক্তি নিতে অস্বীকৃতি জানায়। পুত্রও মন্তব্য করলেন, “মুচলেকা দিয়ে মুক্তি চাই না, কাঁদুক দেশ, স্ত্রী-পুত্র-স্বজন; তবু আমি মুক্তিযোদ্ধা”। বীর জেলানী জেলেই শহিদ হলেন। এই ঘটনাও ইতিহাসে ঠাই পায়
নি। আমরা গোলাম জেলানীকে চিনি না।
চলতি ইতিহাসে গান্ধী, নেহেরু, সুভাষ বসু, চিত্তরঞ্জন, প্যাটেলদের নাম আছে। কিন্তু উবায়দুল্লাহ, মাহমুদুল হাসান, মহম্মদ আলি, সাব্বির আহমদের মত বিশিষ্ট নামগুলো বাদ দেয়া হয়েছে সুপরিকল্পিতভাবে। শুধু মাত্র আবুল কালাম আজাদের নামটাই পাওয়া যায়। তার নাম রেখে দিয়ে যেন দাঁয় এড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনে মুসলমানরাই ছিল অগ্রসেনা। হতাহতের সংখ্যাও মুসলমানদের বেশি। তারপরেও ইতিহাসে তাঁদের ঠাই হয় নি। পাঠ্যপুস্তকে তাঁদের নাম পাওয়া যায় না। পরিবর্তন প্রয়োজন। পরিবর্তন আসন্ন। মুসলিম যুবকদের ইসলামী আন্দোলন, আজাদী আন্দোলন সম্পর্কে জানতে হবে। তবেই না আগামী দিনের জন্য নতুন ইতিহাস গড়ার মানসিকতা মনের মধ্যে লালিত হবে।

আবদুল হাকিম
সিরাজগঞ্জ 
০২.০২.২০১৯

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

About

About Me

মোট দর্শক

ফেসবুকে আমরা