রাজদরবারে
সবাই উপস্থিত। শিক্ষামন্ত্রি, সেনাপতি, সভাকবি শুধু নেই বিজ্ঞানী। হিরোকরাজা
ক্ষেপে গেলেন। “বিজ্ঞানী কই? দেখি না যে তারে”। “মহারাজ তিনি
গবেষণাগারে” ধমক দেন মহারাজা। ডেকে আনো তারে। পত্রপাঠ চলে আসা চাই, নইলে ক্ষমা
নাই। বিজ্ঞানী আসলেন, রাজাকে একটি কাগজের ফুল দিয়ে বলছেন দেখুন কী সুবাস। রাজা
দেখলেন সত্যিই সুবাসিত ফুল। বিজ্ঞানী হেসে বলেন, মহারাজ কাগজের ফুল হলেও চমৎকার
ঘ্রাণ, এই ফুল ঝরে না, মরে না, পোকা পড়ে না। রাজা ক্ষেপে বলেন, “এতদিনের এত সহস্র
হিরের এই তোমার ফল?” বিজ্ঞানী বলেন, “না মহারাজ এটা নগণ্য। বানিয়েছি
মস্তিষ্কপ্রক্ষালন যন্ত্র”। রাজার বুঝতে দেরি হয়। আমতা আমতা করে বলেন
“মগজ ধোলাই?” “ঠিক তাই”। “হেয়ালী কর না তো খুলি বলো”।
বিজ্ঞানী
বলেন,
“ইহা এমন
কল, যাতে রাজকার্য হয়ে যায় জল।
এর
সাহায্যে, রাজভক্তি প্রকাশে নারাজ যে
তাকে
বানানো যাবে একনিষ্ঠ রাজ ভক্ত”।
মহারাজা
খুশি হয়ে-
“বলো
কী?”, “নইলে আর এতোদিনে হলো কী?”
“এটা
কাজ করে কীভাবে?” “এইযন্ত্র, মস্তিষ্কে রোপন করে মন্ত্র”
“কীসের
মন্ত্র?” “যারে যা শিখাতে যান অভিলাষ”
“সাব্বাস,
এই মন্ত্র কাজ করে কতক্ষণ”, “আমরণ, বিরুদ্ধ যত মন্ত্র আছে সব ধুয়ে মাথা পরিস্কার”।
খুব
চমৎকারভাবে সত্যজিৎ রায় রম্য সিনেমাটি বানিয়েছেন। এখনকার শাসনকর্তাদের চরিত্র,
এতদিন আগেই কীভাবে তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, আমার বুঝে আসে না।
হিরোক
রাজার দেশে সিনেমার মত মস্তিষ্কপ্রক্ষালক যন্ত্র আসলেই বানানো সম্ভব কিনা আমার
জানা নেই। তবে ইদানিংকালে আমাকে যে গালিটি বেশি শুনতে হয়েছে সেটা হচ্ছে “ব্রেইন
অয়াশ”। বন্ধু
বলে- অয়াশ করা ব্রেইন, প্রিন্সিপাল ধুলাভাই বলেন- তোর ব্রেইন অয়াশ করা। কিন্তু আমি
বুঝি না, প্রতিদিন গোসলে তো সবাই মাথা ভেজায়। তাইলে শুধু শুধু আমার মাথা অয়াশ করার
কথা বলে কেন?
আমি অবাক
হই, মানুষ কীভাবে আরেকজনকে অয়াশ করা ব্রেইনের মানুষ বলে?
আপনি
অমুক দল করেন, জগণ্য চরিত্রের নিম্নরুচির দল! তাও কেউ কিছু বলবে না।
আপনি
তমুক দল করেন, সমস্যা নাই, কেউ বলবে না আপনার ব্রেইন কেউ অয়াশ করেছে।
কিন্তু......... আপনি যদি কুরআন ভালোবেসে কোনো কুরআনপ্রেমীদের সাথে শরিক হন, তবে সেরেছে! ব্রেইন অয়াশ থেকে শুরু করে গুষ্টি উদ্ধার করে ছাড়বে। যারা আমাকে এইরকম ব্রেইন ওয়াশের কথা বলে, আমি কেনো জানি তাদের কথার কোনো জবাব দিতে পারি না বা জবাবে কিছুই বলি না।
কারো
মাথা হিমু, শরৎ পড়ে ধুইলে আধুনিক আধুনিক লাগে। বাহবা দেয় সবাই।
আর কেউ
কুরআন পড়ে দ্বীনের পথে সঠিকভাবে ঈমানের সহিত চললে, মানুষ বলবে কে বা কারা বা কোনো
দল তার ব্রেইন ওয়াশ করেছে।
নেতার
আনুগত্য, গুণাবলি ইত্যাদি কুরআনে সুস্পষ্টভাবেই বর্ণনা আছে। সেগুলো মানো? তো মরেছো
মগজ ধোলাই বা ব্রেইন ওয়াশের গালি থেকে কেউ তোমাকে রক্ষা করতে পারবে না।
প্রেম-ভালোবাসার
কবিতা লেখো, কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু ইসলামিক কবিতা লেখো তো মরেছো?
কিন্তু
যে যা বলুক ভাই, আমি আমার পথেই যাই।
“উহারা
চাহুক দাসের জীবন, আমরা শহীদি দরজা চাই
নিত্য
মৃত্যু ভীত ওরা, মোরা মৃত্যু কোথায় খুঁজে বেড়াই”।
যারা
এইরকম ব্রেইন ওয়াশ ব্রেইন ওয়াশ চিল্লান, তাদের বলি, আসুন আল্লাহর দেখানো পথে চলি।
আপনার ব্রেইন যদি সত্যিই ওয়াশ হয়ে থাকে তাহলে আসুন পুনরায় কুরআন দিয়ে ব্রেইনটা
ধুয়ে সাফ করে নেই। কুরআনই হোক মগজ ধোলাইয়ের উৎস।
আবদুল হাকিম
সিরাজগঞ্জ
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন